ইনসানে কামেল

বিদআত

– ডাঃ মৌলভী কাজী আবদুর রহমান

যে সব ধর্মীয় কাজ-কর্ম হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বা তাঁর সাহাবায়ে কিরামগণের বা মুজতাহিদীন ঈমামগণের সময়ে ধর্মে পালিত হতো না, সে রূপ কোন কাজকে ইসলাম ধর্মে প্রচলন করাকে বিদআত বলা হয়। বিদআত দুই প্রকার। যথা-
১। বিদআতে হাছানা ও ২। বিদআতে ছাইয়েয়াহ।
১। বিদআতে হাছানা :-
যে সকল নতুন বা প্রবর্তিত ও প্রতিষ্ঠিত কাজ কর্ম কোন দিক দিয়েই ইসলাম বিরোদী নয় বরং ইসলামে প্রচারে সহায়ক ও সুবিধাজনক তাই বিদআতে হাছানা। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়- কোরআন শরীফ পড়ার ও বুঝার জন্য আয়াতের পরপর স্বর চিহ্ন প্রয়োগ এবং আরবী ভাষা বুঝার জন্য আরবী ব্যাকরণ ও ইসলামী শিক্ষার সুবিধার জন্য মাদ্রাসা এবং মক্তব প্রতিষ্ঠা করা “বিদআতে হাসানা”। বিদআতে হাসানা না জায়েজ নহে বরং উহাতে বিস্তর ছওয়াব আছে। আল্লাহর হাবীব বলেছেন-
“যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলামের মধ্যে ভালো নীতি প্রবর্তন করে এবং তার জন্য এই কার্যের ছওয়াব তো আছেই, উপরন্তু তার প্রবর্তিত নীতি অনুসরণ করে পরবর্তীকালে সে সকল লোক যে পরিমাণ ছওয়াব হাছিল করবেন, তাদের সকলের পরিমাণ ছওয়াব তাকে অতিরিক্ত দেয়া হবে। তাকে সকল আমলকারীর সম পরিমাণ ছওয়াব দেয়া হলেও কোন আমলকারীর ছওয়াবের পরিমাণ বিন্দুমাত্র কম হবে না।

২। বিদআতে ছাইয়েয়াহ :-
এমন এক নতুন প্রবর্তিত কাজ যার সমর্থন ইসলামে কোন মতেই নেই বরং তা ইসলামের জন্য অকল্যাণকর, মুসলমানগণের ঈমান আকিদা সংহারক এবং ইসলামের পথে বাঁধার সৃষ্টিকারক অর্থাৎ উন্নতির পরিবর্তে অবনতীর কারণ হয়ে থাকে এ প্রকার বিদআতকেই বিদআতে ছাইয়েয়াহ বলে। এ রূপ বিদআদই হলো পথভ্রষ্টতা এবং এর পরিণাম জাহান্নাম।
উপরোক্ত হাদিসের শেষাংশে হযরত (সাঃ) বলেছেন-
“(আর) যে ব্যক্তি ইসলামে ( মুসলমান সমাজে) কোন কু-প্রথা প্রবর্তন করবে, সে নিজে সেই কু-প্রথার জন্য শাস্তি ভোগ করবে। তদুপরি যত লোক এই কু-প্রথার অনুসরণ করে শা¯িতর ভাগী হবে, তাদের সকলের সমপরিমাণ শাস্তিও তাকে ভোগ করতে হবে। এতে অনুসরণকারীগণের কারও শাস্তির পরিমাণ (বিন্দুমাত্র) লাঘব করা হবে না।”

বড়ই অনুতাপের বিষয় ইদানিং মুসলমান সমাজে নানা প্রকার বিদআত কার্য্যরে প্রচলন হয়েছে বা নতুন নতুন প্রথার প্রচলন করা হচেছ। বহু মুসলমান ইসলামের শরীয়তের দিকে লক্ষ্য না করে শরীয়তের আলেমগণকে অবজ্ঞা করে নিজের অজ্ঞতা, মুর্খতা এবং জাহেলী পীর ফকির ও দরবেশদের কু-মন্ত্রনায় এ সব বিদআত (বিদআতে ছাইয়েয়াহ- ইসলামী আকীদাকে নষ্টকারী কার্যকলাপ)- কে ঈমানদারী বা আল্লাহকে পাওয়ার, আল্লাহকে খুশী করার উপায় বা পথ বলে মনে করছে। আর এ ভাবেই তারা সরল প্রাণ মুসলমান ভাই বোনদের পথ ভ্রষ্ট করছে দিনের পর দিন। তারা নিজেরাও জাহান্নামের পথ ধরেছে এবং অন্যকেও জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিচেছ।
হক্কানী তরীকতপন্থি আলেমের খোঁজ করে তাদের সহব্বতে কিছু সময় অতিবাহিত করলে এবং তাদের নিকট হতে সঠিক পথের সন্ধান নিলে নিজেদের জিন্দেগী গড়ে তোলা যায় এবং এ সব ভুল ভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।
দুনিয়ার ধন-স¤পদ, মান-সম্মান, লোভ-লালসায় পাগল হয়ে যারা আল্লাহর দ্বীনকে নিজের ইচছামত ব্যবহার করছে, ভন্ড পীর-ফকিরদের প্রবঞ্চনায় পরে আসল হাকীকত সন্ধানের পরিবর্তে মিথ্যার পিছনে এবং ভ্রান্ত্র পথে পরিশ্রম করছে, তারা না জেনে, না বুঝে আল্লাহকে খুশী করার পরিবর্তে চির শক্র চির জাহান্নামী ইবলিসকেই বরং খুশী করছে, এটা খুবই পরিতাপের বিষয়।
কোন পীর বুজুর্গের দরগাহে মেলা করা, মোমবাতি দেয়া, মানত করা, মেয়েলোকদের সেথায় যাওয়া, কবরে চুমু দেয়া, কবরের মাটি শরীরে বা মাথায় লাগানো ইত্যাদি বিদআত কাজ। এ থেকে আমাদের অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। শিষ্যের মনের কথা পীর সাহেব জানেন, তিনি ইচছা করলে, দয়া করলে, তার মকসুদ পূর্ণ করে দিতে পারেন- এরূপ ধারণা করা শিরক।
পীরের মাজারে মানত বা নজর নেয়াজ দিতে বা জিয়ারত করতে গিয়ে সেস্থান থেকে বের হয়ে আসার সময় এতই আদব দেখায় যে পিছু হটতে হটতে বের হয়। এরূপ করা যায়েজ নয়। স¤পূর্ণ বেদাত। স্বাভাবিক নিয়মে বের হতে হবে।

(চলবে………..)

 

Related posts

Leave a Comment